bd24 প্রতিবেদক | ১৪ জুন ২০২৫

এয়ার ইন্ডিয়া দুর্ঘটনার একমাত্র জীবিত যাত্রী
এয়ার ইন্ডিয়া দুর্ঘটনার একমাত্র জীবিত যাত্রী

এক ভয়াবহ ট্রাজেডিতে মাত্র ৩৩ সেকেন্ডে প্রাণ হারায় ২৪০ জনেরও বেশি, অথচ শুধু একজন মানুষ জীবিত বেরিয়ে আসেন।

“আমি জানি না কিভাবে বেঁচে গেলাম। আমার চোখের সামনেই মানুষ মা*র যাচ্ছিল,” হাসপাতালে শুয়ে এ কথা বলেন বিশ্বাস কুমার রমেশ।

৪০ বছর বয়সী এই ব্যক্তি ব্রিটিশ নাগরিক হলেও ভারতীয় বংশোদ্ভূত। গুজরাটে বিধ্বস্ত হওয়া সেই এয়ার ইন্ডিয়া ফ্লাইটে যা ঘটেছিল, তার বর্ণনা দেন তিনি।

এয়ার ইন্ডিয়ার একটি ফ্লাইট বিধ্বস্ত হলে, ২৩৪ যাত্রী ও ক্রু সদস্যদের মধ্যে কেবল একজন – বিশ্বাস – জীবিত বেরিয়ে আসেন ধ্বংসস্তূপ থেকে।

লন্ডনগামী AI171 ফ্লাইটটি উড্ডয়নের ৩৩ সেকেন্ডের মধ্যেই একটি মেডিকেল কলেজের ছাত্রাবাসে আছড়ে পড়ে। বিশাল ধ্বংসস্তূপ থেকে রক্তাক্ত ও হতবিহ্বল অবস্থায় বিশ্বাস বেরিয়ে আসেন। তাকে বলতে শোনা যায়, “প্লেনটা বিস্ফোরিত হয়েছে।”

দীর্ঘ ২০ বছর যুক্তরাজ্যে বসবাসকারী বিশ্বাস ভারতে পরিবারের সঙ্গে দেখা করে স্ত্রী ও সন্তানের কাছে ফিরছিলেন। তিনি বসেছিলেন ১১A সিটে, আর তার ভাই অজয়কুমার ১১J সিটে।

বিশ্বাস জানান, “ফ্লাইট ছেড়ে ওঠার ৫ থেকে ১০ সেকেন্ডের মধ্যেই বোঝা যাচ্ছিল কিছু একটা সমস্যা হয়েছে। প্লেনটা যেন আটকে ছিল আকাশে।”

ক্যাপ্টেন সুমিত সাবরওয়াল ও কো-পাইলট ক্লাইভ কুন্দর তড়িঘড়ি মেদে কল পাঠান। তাদের সম্মিলিত ফ্লাইট অভিজ্ঞতা ছিল ৯,০০০ ঘণ্টারও বেশি।

“বোয়িং ৭৮৭ ড্রিমলাইনারটি ঠিকমতো উচ্চতা পাচ্ছিল না, শুধু যেন ভেসে যাচ্ছিল,” বলেন বিশ্বাস।

“হঠাৎ আলো জ্বলে উঠল – সবুজ আর সাদা। এরপরই প্লেনটি একটি ভবনে ধাক্কা খায়,” জানান তিনি।

সে “ভবনটি” ছিল স্থানীয় মেডিকেল ছাত্রদের হোস্টেল, যেখানে ছাত্ররা তখন মধ্যাহ্নভোজ করছিলেন।

ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী হাসপাতালে গিয়ে বিশ্বাসের সঙ্গে দেখা করেন।

“আমার চারপাশে সবাই মৃত বা মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়ছিল,” বলেন বিশ্বাস।

তিনি বলেন, হয়তো বিমানের অন্য পাশের যাত্রীরা তার মতো করে বেরিয়ে আসতে পারেননি। “যখন আমি এক্সিটটা দেখলাম, ভাবলাম আমি বের হতে পারি। চেষ্টা করলাম, আর পারলাম।”

বিস্ফোরণ থেকে বেরিয়ে আসার সময় তার বাঁ হাতে পুড়ে যায় এবং তিনি চিৎকার করতে থাকেন, যতক্ষণ না সাহায্য আসে।

“আমি জানি না কিভাবে বেঁচে গেলাম। আমার চোখের সামনে এয়ার হোস্টেস ও কাছাকাছি দুজন মা*রা গেলেন… আমি ধ্বংসস্তূপের মধ্য দিয়ে হেঁটে বেরিয়ে আসি,” তিনি বলেন।

১৩ জুন শুক্রবার, প্রধানমন্ত্রী মোদী তার খোঁজ নিতে হাসপাতালে আসেন।

“প্রধানমন্ত্রী জানতে চাইলেন আমি কেমন আছি, কীভাবে সব কিছু ঘটল। আমি তাকে বললাম, আমি এখন ঠিক আছি,” বলেন বিশ্বাস।

তার ভাই একই ফ্লাইটে ছিলেন, কিন্তু তিনি বেঁচে ফেরেননি।

বিশ্বাসের বেঁচে ফেরার গল্প সামাজিক মাধ্যমে প্রবল আলোড়ন তোলে। কেউ বলেন, “এটা তো অলৌকিক।”
আরেকজন লিখেন, “আমি হলে লটারি কিনতাম।”
“এই লোকটা এখন কোটিপতি হয়ে যাবে,” মন্তব্য করেন কেউ।
আরও একজন লেখেন, “এক মিলিয়নের মধ্যে একবার ঘটে এমন কিছু।”

তবে কিছু মানুষ তার গল্পের সত্যতা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন।
“এই লোকটা মিথ্যাবাদী,” কেউ বলেন।
আরেকজন বলেন, “প্লেন ক্র্যাশ করেছে আর আমি নাকি ভেতরে ছিলাম – এই গল্প বানানো।”
“তার ফোনে কোনো দাগ নেই, কোনো ফাটল নেই, এই লোক একটা ভূত,” মন্তব্য আরেকজনের।

বিশ্বাসের ছোট ভাই নয়ন কুমার রমেশ, যিনি লেস্টারে থাকেন, বলেছিলেন: “আমরা শুনেই শকড হয়ে গেছিলাম। আমি তাকে গতকাল সকালে শেষ কথা বলেছি।”

একটি পরিবারের পাঁচ সদস্য, যারা লন্ডনে নতুন জীবন শুরু করতে যাচ্ছিলেন, সেই বিমানে ছিলেন। উড্ডয়নের ঠিক আগ মুহূর্তে তোলা একটি ছবিতে দেখা যায় তারা হাসিমুখে বসে আছেন।

ঘটনার আগে দিল্লি থেকে আহমেদাবাদ পর্যন্ত ফ্লাইটে প্রযুক্তিগত ত্রুটি ধরা পড়ে – এক যাত্রী আকাশ বাত্সা ভিডিও করে দেখান কিভাবে প্লেনের টিভি স্ক্রিন, আলো ও এসি কাজ করছিল না।

তিনি বলেন, “আমরা ট্যাক্সি করার আগেই এসি বন্ধ। সবাই ম্যাগাজিন দিয়ে বাতাস নিচ্ছে।”

সামাজিক মাধ্যমে কেউ লিখেন, “এই মানুষটা তো সত্যিই পৃথিবীর সবচেয়ে ভাগ্যবান।